প্র্যাঙ্ক

— বুঝলেন মশাই, ইউটিউবে দারুণ-দারুণ কয়েকটা প্র্যাঙ্ক ভিডিও দেখলাম।
— দেখলেন?
— কাল, বেশ রাত অবধি।
— কী দেখলেন?
— অারে, দারুণ জিনিস। একটা লোক একটা পাঁচিলে বসে নিশ্চিন্তে বই পড়ছিল। পিছন থেকে অার একজন বিগফুটের কস্টিউম পরে এসে সেই প্রথম লোকটাকে যেইনা পিছন থেকে টোকা মেরেছে…
— মেরেছে?
— অার বলবেন না। লোকটা লাফিয়ে উঠে পাঁচিল থেকে পড়ে…
— পড়ে গেল?
— পড়ে তো গেলই। নীচে ঢালু জমি ছিল। লোকটা পড়ল, তারপর গড়াতে-গড়াতে সোজা গিয়ে একটা গাছে গিয়ে ধড়াম। যা হাসলুম পাঁচ মিনিট ধরে, পাড়া-পড়শি উঠে পড়েনি তাই ভাগ্যের।
— হাসলেন?
— হাসব না? কীরকম উল্টে-পাল্টে ধপাস-ধাঁই পড়ে গড়াতে-গড়াতে গিয়ে ধম করে মারল গাছটাকে।
— হুম। অাউর কুছ দেখলেন নাকি?
— অারে শুনুন না। স্বামী-স্ত্রী জেটিঘাটে বসে অারামে মাছ ধরছেন, হঠাৎ জল থেকে একটা লোক মুখোশ পরে কাটারি…নাকি মাশেটি না কী বলে…হাতে লাফিয়ে উঠল। ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলা তো অ্যায়সা চমকানি খেলেন, দুজনে দুদিকে জলে উল্টে পড়লেন।
— উও স্পানিশ হ্যায়। মাচেটে। হাসলেন?
— বাঃ, হাসব না? হাসিরই তো ব্যাপার।
— অাউর বোলেন।
— একটা ইয়ং মেয়ে, বুঝলেন? সুপারমার্কেটে। সে একটা ডিসপ্লে পেরোতেই দেখে একটা লোক মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে, পাশে ছুরি, মেঝে রক্তে-রক্তময়।
— পাস মে চাকু ভি থা?
— ছিলই তো। মেয়েটা ভয় পেয়ে যেই চেঁচাতে শুরু করে পিছন ফিরল, অমনি দেখে তিনটে ক্লাউন কস্টিউম পরে রক্তে ভেজা লোক হাতে ছোরা-চপার-ম্যাচে…
— মাচেটে।
— ইয়েস। ওই মাশেটে…
— মা। চে। টে। চে, শে নয়।
— বুয়েছি। ওই নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটিও তো সেই যে চিৎকার শুরু করল…
— হাসলেন?
— হাসব না? যেভাবে পাড়া মাথায় করছিল। ফাইনালি শুনুন, একটা বুড়ো লোক, বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরছেন, সন্ধ্যাবেলা, অালো-অাঁধারি, বারান্দার অালোটাও কাজ করছে না। কী দারুণ পরিবেশ চিন্তা করুন। সিঁড়ি বেয়ে–কারেন্ট অফ–পাঁচতলা চড়ে যেইনা নিজের ল্যান্ডিং-এ এসেছেন, হঠাৎ সামনে দেখেন, সেই প্রায় অন্ধকার থেকে…
— ক্লাউন কস্টিউম?
— না। একটি মেয়ে। কাপড়ে লাল রং লাগানো, দেখতে রক্ত লাগছিল। গলাতেও রক্ত, যেন গলা কাটা।
— ভেরি গ্রাফিক।
— অারে সেখানেই তো মজা। দেখেই বুড়োটা এক সেকেন্ড থ মেরে গেল, হাত থেকে বাজারের ব্যাগ পড়ে গেল, অার পিছোতে-পিছোতে সেই যে উল্টে পড়লেন…
— অার উঠলেন না?
— না না, কী যে বলেন? ভিডিও ওখানেই শেষ। অামিও পাঁচ মিনিট হাসতে লাগলাম, হাসতে-হাসতে পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে এল।
— ঘোসবাবু?
— বলুন।
— ওই ভিডিও হাম ভি দেখা হ্যায়।
— বলেন কী? এতক্ষণ বলেন নি কেন? দারুণ না?
— এক্সেলেন্ট।
— তাহলে? কী মজার-মজার লোক অাছে পৃথিবীতে। এইসব প্র্যাঙ্ক না থাকলে লাইফ ডালভাত হয়ে যেত মশাই।
— ঘোসবাবু?
— হুঁ?
— অাপনি তো জানেনই, হামার কিতনা নেটওয়ার্ক অাছে, হোল ইন্ডিয়া কিঁউ, হোল ওয়ার্ল্ডে। গেয়ারহ্ মুল্ক নেহী, সব মুল্ক মে।
— তা অার বলতে? কে না জানে হে হে।
— তো ম্যায় ইস ভিডিও কো দেখকর থোড়া ইনকোয়ারি কিয়া থা।
— অাচ্ছা? হঠাৎ?
— অাপনি তো জানেন ঘোসবাবু, হামার কুতুহল, মানে জিসকো অাপলোগ কিউরিয়সিটি বোলতে হ্যাঁয়, উও থোড়া জেয়াদা অাছে।
— সে তো বটেই সে তো বটেই। তো কী জানলেন?
— উও যো পহলা লড়কা থা না, যো দীওয়ার কে ঊপর ব্যাঠকে কিতাব পঢ় রহা থা…
— হ্যাঁ হ্যাঁ, অারে যে সেই দারুণ গড়াগড়ি খেল।
— অাউর উসকে বাদ ট্রী সে টক্কর হুয়া।
— অাহা, তাই তো। লাগেনি নিশ্চই। ইয়াং ম্যান। সয়ে যাবে।
— সে প্যারালাইজড, ঘোসবাবু। গাছে টক্কর খেয়ে ওর নেক ইঞ্জুরি হয়েছে। হুইলচেয়ারে বসে সে এখন।
— বলেন কী? পারমানেন্ট?
— নেহী। ডাকটর বলেছে ঠিক হো যায়েগা, লেকিন উসকা ইস সাল কে লিয়ে কালেজ যানা বিগর গেয়া। উসী এগজাম কে লিয়ে পঢ় রহা থা।
— সর্বনাশ।
— উও যো হাসবেন্ড-ওয়াইফ, যো পানি মে গিড় গয়ে থে, কিসি কো সুইমিং নেহী অাতা থা।
— কিন্তু যে লোকটা মুখোশ পড়ে…
— সে ওয়াইফকে রেসকিউ করেছে। হাসবেন্ড শক পেয়ে তলিয়ে যায়। যো ক্যামেরাম্যান থা উসে ভী মালুম নেহী থা সুইমিং। হাজবেন্ড ড্রাউন্ড।
— কেলেঙ্কারি।
— সুপারমার্কেটের মেয়েটার হার্ট ডিজিজ ছিল, ফ্রম চাইল্ডহুড। ফাদার ছোটবেলায় মাদারকে অ্যাবিউজ করে ছেড়ে চলে যায়, মাদার তিনঠো জব করে মেয়েকে স্কুলে পঢ়িয়েছে অাউর হার্ট কা ট্রিটমেন্ট ভী কিয়েছে।
— ওঃ হো।
— মেয়ের ছোটবেলায় বার্থডে পার্টিতে অাঙ্কেল ক্লাউন কস্টিউম পড়ে ছেড়খানি করেছিল, বলাৎকার করেছিল।
— মাই গড।
— সেই মেয়ে চিরকাল ক্লাউনকে ডরায়। সুপারমার্কেটে তিনঠো ব্লাডি ক্লাউন দেখে তার ইমিডিয়েট হার্ট অ্যাটাক হয়। ডেড ইন সেকেন্ডস।
— হরিবল্। অামি তো বুঝতেই পারিনি। অার…অার শেষের বৃদ্ধ ভদ্রলোক…
— উনি ফাইন অাছেন। বসে পড়ে কোমড়ে স্লাইট পেন পেয়েছেন, তবে বেশ এনজয় করেছেন প্র্যাঙ্কটা।
— যাক বাবা। উফফ।
— বোঝলেন তো ঘোসবাবু, প্র্যাঙ্ক ইজ নট অলওয়েজ গুড।
— কিন্তু একটা কথা বলুন। এতসব হয়ে গেল, তো ভিডিওটা বেরোল কীভাবে? কেস হয়ে যায়নি?
— কেস তো হুয়া থা। পহলা ওয়ালা মে কৌন হরকত কিয়া থা কিসি কো পতা নেহী। উও হাদসে কে বাদ দোনো ভাগা উহাঁসে, অাউর বাদ মে ভিডিও অাপলোড কর দিয়া। কোই দুসরা অাদমী ন জানকে উসকো এডিট কর দিয়া।
— অার হাসবেন্ড যে ডুবে মরলেন…
— কেস চলছে ঘোসবাবু। ম্যানস্লটার অাউর ক্রিমিনালি নেগলিজেন্ট হোমিসাইড। ১৯.০৪, ১৯.০৫ ধারা মে।
— কোথাকার ধারা এটা?
— টেক্সাস।
— কিন্তু এ তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অাইসোলেটেড কেস। কত হাজার প্র্যাঙ্ক ভিডিও হয়, দুজনের ক্ষেত্রে ট্র্যাজেডি হলেই…
— দুজন কি এনাফ নয় ঘোসবাবু? কটা চান অাপনি? কিতনা কেস চাহিয়ে অাপকো? অাপনি কি চান অারো এরকম কেস হয়?
— না মানে একটা হাসির ব্যাপার নিয়ে এত চটছেন কেন? যারা প্র্যাঙ্ক করছে তারা কি অার জানত?
— অাউর ইসিলিয়ে উন লোগোঁ কা কোই রিসপন্সিবিলিটি নেই? অাপ কেয়া সোচতে হ্যাঁয়, সব লোগ রিসপন্সিবিলিটি ছেড়ে ভাগে?
— না না, তা কেন?
— মেয়েটার কেসটা ঘোসবাবু। হার্ট কা ডিজিজ। তিন ক্লাউন অপনে অাপ কো পুলিস কে হভালে কর দিয়া। এক তো পুরা বাত সুনকে খুদকুশি ভি কর ডালা।
— খুদকুশি? মানে সুইসাইড?
— ইয়েস ঘোসবাবু। সুইসাইড। অাতমাহত্তেয়া। বাকি দুজন অলমোস্ট পাগল। মা-র সেম অবস্থা।
— বুঝলেন মশাই?
— বোলেন ঘোসবাবু।
— প্র্যাঙ্ক ভিডিও দেখা এইবার থামাবো।
— স্পোকেন লাইক এ গুড ম্যান ঘোসবাবু। লিজিয়ে, কেষ্টর দোকান অা গিয়া, বেগুনির অার্ডার দিন।


সোমদেব ঘোষ, ২০১৫-১১-০৭, কলিকাতা শহর।

1 thoughts on “প্র্যাঙ্ক

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান